সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১২ পূর্বাহ্ন
পিরোজপুর প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আশীষ কুমার হাওলাদার নামে এক কাতার প্রবাসি আদম ব্যাপারির খপ্পড়ে পড়ে কাতারে গিয়ে প্রতারিত ও নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে এসেছে মঠবাড়িয়া ও পাথারঘাটা উপজেলার ১৩ তরুণ। এদের ১০ জন মঠবাড়িয়ার বিভিন্ন গ্রামের ও তিন জন পার্শ্ববর্তী পাথরঘাটার চরদুয়ানী গ্রামের বাসিন্দা। প্রতারক আশিষ কুমার হালদার গত সাত বছর কাতারের সসানাইয়া নামক এলাকার ৫৭ নম্বর আলবানা ষ্ট্রীটে ৩৬ নম্বর বাসায় বসবাস করে প্রতারণা করে আসছে।
প্রতারণার শিকার তরণরা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বৃহস্পতিবার সকালে মমঠবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সম্মূখ সড়কে মানববন্ধন করে এ প্রতারণার প্রতিবাদ জানায়। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন, প্রতারিত পরিবারের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক সুদর্শন পাইক, ভূক্তভোগি মঠবাড়িয়ার দক্ষিণ সোনাখালী গ্রামের তরুণ সমীর হালদার, রাজিব মিস্ত্রী, প্রীতম গাইন, কিশোর গোলদার, পাশ্ববর্তী পাথরঘাটার চরদুয়ানী গ্রামের তরুণ পবিত্র গোলদার ও মিন্টু অধিকারি প্রমুখ।
ভুক্তভোগি তরুণরা অভিভযোগ করেন, মঠবাড়িয়ার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাখালী গ্রামের মৃত সতীশ হাওলাদার এর ছেলে কাতার প্রবাসি আশীষ হাওলাদার ও তার স্ত্রী নূপুর হাওলাদার মিলে মঠবাড়িয়া,পাথরঘাটাসহ উপকূলীয় কয়েকটি জনপদের অনন্ত ৪০ থেকে ৫০ জন বেকার তরুণদের কাতারে লোভনীয় বেতনে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে জনপ্রতি ৮ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেয়। এমন অনেকে টাকা দিতে না পারায় তাদের কাছ থেকে সমুদয় অর্থের জমি লিখেঝ নেন। এসব কাজে আদম ব্যাপারি আশীষ এর স্ত্রী নূপুর হালদার ও ছেলে জয় হালদার সমন্বয় করে অর্থ উত্তোলনন করেন। পরে এসব তরুণদের কাতার নিয়ে একমাস রাস্তা ক্লিনার ও পরিবহনে মাল আনলোডের কাজ দেয়। একমাস কাজ শেষে এসব প্রবাসি তরুণরা কর্মহীন হয়ে পড়লে আদম ব্যাপারি আশীষ তাদের কাজ দিতে না পারায় প্রবাসি তরুণ চরম অর্থ ও খাদ্য সংকটে পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করে। এমনকি প্রতারক আশীষ কর্মহীনন তরুণদের মারধর ও মানসিক নির্যাতন চালায়। পরে বিপাকে পড়া তরুণরা তাদের পরিবারের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে প্রাণ ভয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরে আসেন।
মঠবাড়িয়ার তুষখালী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক সুদর্শন পাইক অভিযোগ করেন, আমার জামাই মিন্টু অধিকারিকে ৮ লাখ টাকার বিনিময়ে আদম ব্যবসায়ি আশীষ কাতার নিয়ে কোনও কাজ না দিয়ে মারধার করে দেশে পাঠিয়ে দেয়। জমি বিক্রি করে দালালের পাওনা দুই দফায় পরিশোধ করে আমরা এখন নিঃস্ব। আমরা এর বিহিত চাই। প্রতারক আশীষ এর বিচার ও সকল অর্থ ফেরত চাই।
উপজেলার দক্ষিণ সোনাখালী গ্রামের রাজ মিস্ত্রী সমীর হাওলাদার বলেন, কাতারে প্রতারক আশীষ এক লাখ টাকা বেতনে চাকুরি দেবে এমন প্রলোভনে পড়ে প্রথমে তাকে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ দেই। পরে ৬ কাঠা জমি প্রতারক আশীষ এর নামে লিখে দেই। কাতার যাওয়ার পর কোনও কাজ সে দেয়নি। মারধর করে দেশে পাঠিয়ে দেয়। গত এক মাস আগে দেশে ফিরে এখন আমার পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি।
পার্শ্ববর্তী পাথরঘাটার কাঁঠালতলী গ্রামের পবিত্র গোলদার বলেন, কাতারে এক লাখ টাকা মাসিক বেতনের প্রলোভনে পড়ে পৈত্রিক জমি বিক্রি করে দালাল আশীষকে ৮ লাখ টাকা দেই। দুই দফায় ওই টাকা তার স্ত্রীর কাজে পরিশোধের পর কাতার যাই। সেখানে গিয়ে কোনও কাজ আশীষ দেয়নি। মানসিক ও শারিরীক নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসি। এখন পরিবারেও মুখ দেখাতে পারছিনা। অর্থ জমি হারিয়ে এখন আমি হতাশায় জর্জরিত। আমি এ প্রতারণার বিচার দাবি করছি।
এ ব্যাপরে মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কামমরুজ্জামান তালুকদার বলেন, আদম ব্যাপারির খপ্পড়ে পড়ে প্রতারণার শিকার এ তরুণর মৌখিক অভিযোগ থানায় এসছিলো। অভিযুক্ত ব্যাক্তি কাতারে অবস্থান করছে। প্রতারিত তরুণদের জনশক্তি কর্মসংসস্থান ব্যুরোতে অভিযোগের প্রাথমিক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।